এ ঘোষণা সকল জাতি এবং রাষ্ট্রের সাফল্যের সাধারণ মানদন্ড হিসেবে সেই লক্ষে নিবেদিত হবে, যেখানে প্রটিতি ব্যক্তি এবং সমাজের প্রতিটি অঙ্গ এ ঘোষণাকে সবসময় মনে রেখে পাঠদান ও শিক্ষার মাধ্যমে এই স্বাধীনতা ও সকল ও অধিকার সমূহের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে সচেষ্ট হবে এবং সকল সদস্য রাষ্ট্র ও তাদের অধীনস্ত ভূখন্ডের জাতিসমূহ উত্তরোত্তর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়াসের মাধ্যমে এই অধিকার এবং স্বাধীনতাসমূহের সার্বজনীন ও কার্যকর স্বীকৃতি আদায় এবং যথাযত পালন নিশ্চিত করবে।

ধারা ১

সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে । তাঁদের বিবেক এবং বুদ্ধি আছে; সুতারাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচারণ করা উচিৎ

এ ঘোষণায় উল্লেখিত স্বাধীনতা এবং অধিকারসমূহে গোত্র, ধর্ম, বর্ণ, শিক্ষা, ভাষা, রাজনৈতিক বা অন্যাবিধ সমতা, জাতীয় বা সামাজিক উৎপত্তি, জন্ম, সম্পত্তি বা অন্য কোন মর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই সমান অধিকার থাকবে।

ধারা ২

কোন দেশ বা ভুখন্ডের রাজনৈতিক, সীমানাগত বা আন্তর্জাতিক মর্যাদায় ভিত্তিতে তার কোন অধিবাসীর প্রতি কোনরূপ বৈষম্য করা হবে না; সে দেশ বা ভূখন্ড স্বাধীনই হোক, হোক অছিভূক্ত, অস্বায়ত্বশাসিত কিংবা সার্বভোমত্বের অন্য কোন সীমাবধ্যতায় বিরাজমান

ধারা ৩

জীবন, স্বাধিনতা এবং দৈহিক নিরাপত্তার প্রত্যেকের অধিকার আছে।

ধারা ৪

কাউকে অধিনত বা দাসত্বে আবদ্ধ করা যাবে না। সকল প্রকার ক্রীতদাস প্রথা এবং দাসব্যবসা নিষিদ্ধ করা হবে।

ধারা ৫

কাউকে নির্যাতন করা যাবে না; কিংবা কারো প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অমাননাকর আচরণ করা যাবে না অথবা কাউকে এহেন শাস্তি দেওয়া যাবে না।

ধারা ৬

আইনের সামনে প্রত্যেকেরই ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি লাভের অধিকার আছে।

ধারা ৭

আইনের চোখে সবাই সমান এবং ব্যক্তিনির্বিশেষে সকলেই আইনের আশ্রয় সমানভাবে ভোগ করবে। এই ঘোষণা লঙঘন করে এমন বৈষম্য বা বৈষম্য সৃষ্টির প্ররোচনার মুখে সমান ভাবে আশ্রয় লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই আছে।

ধারা ৮

শাসন্তন্ত্র বা আইনে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লঙঘনের ক্ষেত্রে উপযোক্ত জাতীয় বিচার আদালতের কাছ থেকে কার্যকর প্রতিকার লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।

ধারা ৯

কাউকেই খেয়লখুশীমত গ্রেপ্তার বা অন্তরীণ করা কিংবা নর্বাসন দেওয়া যাবে না।

ধারা ১০

নিজের অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ এবং নিজের বিরুদ্ধে আনীত ফৌজদারী অভিযোগ নিরূপণের জন্য প্রত্যেকেরই পূর্ণ সমতার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন এবং নিরূপেক্ষ বিচার-আদালতে প্রকাশ্য শুনানি লাভের অধিকার রয়েছে

ধারা ১১

১. দন্ডযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যাক্তির আত্নপক্ষ সমর্থনের নিশ্চিত অধিকারসম্বলিত একটি প্রকাশ্য আদালতে আইনানুসারে দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ গণ্য হওয়ার অধিকার থাকবে।

২. কাউকেই এমন কাজ কাজ বা ত্রুটির জন্য দন্ডযোগ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। যে কাজ বা ত্রুটি সংঘটনের সময় জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আইনের দন্ডনীয় অপরাধ ছিলনা দন্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটনের সময় যে শাস্তি প্রযোজ্য ছিল, তার চেয়ে গুরুতর শাস্তিও দেওয়া যাবে না।

ধারা ১২

কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কিংবা তার গৃহ, পরিবার ও চিঠিপত্রের ব্যাপারে কেয়ালখুশিমত হস্তক্ষেপ কিংবা তাঁর সুনাম ও সম্মানের উপর আঘাত করা চলবে না। এধনের হস্তক্ষেপে বা আঘাতের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার প্রত্যেকেরি রয়েছে।

ধারা ১৩

(১) নিজ রাষ্টের চৌহদ্দির মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং বসবাস করার অধিকার প্রত্যেকেরই রেয়েছে।

(২) প্রতেকেরই নিজ দেশ সহ যে কোন দেশ পরিত্যাগ এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অধিকার রয়েছে।

ধারা ১৪

(১) নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভিন্নদেশে আশ্রয় প্রার্থনা করার এবং সে দেশের আশ্রয়ে থাকবার অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।

(২) অরাজনৈতিক অপরাধ এবং জাতিসংঘের উদ্দেশ্য এবং মূলনীতির পরিপন্থী কোন কাজ থেকে সত্যিকারভাবে উদ্ভূত অভিযোগের ক্ষেত্রে এ অধিকার প্রার্থনা নাও করা যেতে পারে।

ধারা ১৫

(১) প্রত্যেকেরই একটি জাতীয়তার অধিকার রয়েছে।

(২) কাউকেই যথেচ্ছভাবে তার জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না, কিংবা কারো জাতীয়তা পরিবর্তনের অধিকার অগ্রাহ্য করা যাবে না।

ধারা ১৬

১) ধর্ম, গোত্র ও জাতি নির্বিশেষে সকল পূর্ণ নরনারীর বিয়ে করা এবং পরিবার প্রতিষ্ঠার অধিকার রয়েছে। বিয়ে দাম্পত্যজীবন এবং বিবাহবিচ্ছেদে তাদের সমান অধিকার থাকবে।

(২) বিয়েতে ইচ্ছুক নরনারীর স্বাধীন এবং পূর্ণ সম্মতিতেই কেবল বিয়ে সম্পন্ন হবে।

(৩) পরিবার হচ্ছে সমাজের স্বাভাবিক এবং মৌলিক গোষ্টী-একক, সুতরাং সমাজ ও রাষ্টের কাছ থেকে নিরাপত্তা লাভের অধিকার পরিবারের রয়েছে।

ধারা ১৭

১)প্রত্যেকেরই একা অথবা অন্যের সঙ্গে মিলিতভাবে সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার আছে,

(২) কাউকেই যথেচ্ছভাবে তার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না

ধারা ১৮

প্রতেকেরই ধর্ম, বিবেক ও চিন্তার স্বাধীনতায় অধিকার রয়েছে। এ অধিকারের সঙ্গে ধর্ম বা বিশ্বাস পরিবর্তনের অধিকার এওং এই সঙ্গে, প্রকাশ্যে বা একান্তে, একা বা অন্যের সঙ্গে মিলিতভাবে, শিক্ষাদান, অনুশীলন, উপাসনা বা আচাররত পালনের মাধ্যমে ধর্ম বা বিশ্বাস ব্যক্ত করার অধিকার।

ধারা ১৯

প্রত্যেকেরই মতামত পোষণ এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতায় অধিকার রয়েছে। অবাধে মতামত পোষণ এবং রাষ্টিয় সীমানা নির্বিশেষে যে কোন মধ্যমের মারফত ভাব এবং তথ্য জ্ঞাপন, গ্রহণ ও সন্ধানের স্বাধীনতাও এ অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।

ধারা ২০

(১) প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশগ্রহণ ও সমিতি গঠনের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে।

(২) কাউকে কোন সংঘভূক্ত হতে বাধ্য করা যাবে না।

ধারা ২১

(১) প্রত্যক্ষভাবে বা অবাধে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশের শাসন পরিচালনায় অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেকরই রয়েছে।

(২) নিজ দেশের সরকারী চাকুরীতে সমান সুযোক লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।

(৩) জনগণের ইচ্ছাই হবে সরকারের শাসন ভিত্তি; এই ইচ্ছা নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত প্রকৃত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্যক্ত হবে; গোপন ব্যালট কিংবা সমপর্যায়ের কোন অবাদ ভোটদান পদ্ধতিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ধারা ২২

সমাজের সদস্য হিসেবে পত্যেকেরই সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার আছে। জাতীয় প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সংগঠন ও সম্পদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রত্যেকেরই আপন মর্যাদা এবং ব্যক্তিরত্বের অবাধ বিকাশের অপরিহার্য সামজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ আদায়ের অধিকার রয়েছে।

ধারা ২৩

(১)প্রত্যেকেরই কাজ করার স্বাধীনভাবে চাকুরি বেছে নেবার কাজের ন্যয্য এবং অনুকূল পরিবেশ লাভ করার এবং বেকারত্ব থেকে রক্ষিত হবার অধিকার রয়েছে।

(২) কোনরূপ বৈষম্য ছাড়া সমান কাজের জন্য সমান বেতন পাবার অধিকার প্রত্যেকেরই আছে।

(৩) কাজ করেন এমন প্রত্যেকেরই নিজের এবং পরিবারের মানবিক মর্যাদার সমতুল্য অস্তিত্বের নিশ্চয়তা দিতে পারে এমন ন্যায্য ও অনুকূল পারিশ্রমিক লাভের অধিকার রয়েছে; প্রয়োজনবোধে একে অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাদি দ্বারা পরিবর্ধিত করা যেতে পারে।

(৪) নিজ স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য প্রত্যেকেরই ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং তাতে যোগদানের অধিকার রয়েছে।

ধারা ২৪

প্রত্যেকেরই বিশ্রাম ও অবসরের অধিকার রয়েছে; নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে বেতন সহ ছুটি এবং পেশাগত কাজের যুক্তিসঙ্গত সীমাও এ অধিকারের অন্তরভূক্ত।

ধারা ২৫

১) খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান,চিকিৎসা ও প্রয়োজনিয় সমাজ কল্যাণমূল্ক কার্যাদির সুযোগ এবং এ সঙ্গে পীড়া, অক্ষমতা, বৈধব্য, বার্ধক্য অথবা জীবনযাপনে অনিবার্যকারণে সংঘটিত অন্যান্য অপারাগতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং বেকার হলে নিরাপত্তার অধিকার সহ নিজের এবং নিজ পরিবারের স্বাস্থ্য এবং কল্যাণের জন্য পর্যাপ্ত জীবনমানের অধিকার প্রতেকেরই রয়েছে।

(২) মাতৃত্ব এবং শৈশাবাস্থায় প্রতিটি নারী এবং শিশুর বিশেষ যত্ন এবং সাহায্য লাভের অধিকার আছে। বিবাহবন্ধন-বহির্ভূত কিংবা বিবাহবন্ধনজাত সকল শিশু অভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ করবে।

ধারা ২৬

(১) প্রত্যেকেরই শিক্ষালাভের অধিকার রয়েছে। অন্ততঃপক্ষে প্রাথমিক ও মৌলিক পর্যায়ের শিক্ষা অবৈতনিক হবে। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে। কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সাধারণভাবে লভ্য থাকবে এবং উচ্চতর শিক্ষা মেধার ভিত্তিতে সকলের জন্য সমানভাবে উন্মুক্ত থাকবে।

(২) ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশের এবং মানবিক অধিকার ও মৌলিক সাধিনতা-সমূহের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সুদৃঢ় করার লক্ষে শিক্ষা পরিচালিত হবে। শিক্ষা সকল জাতি, গোত্র, এবং ধর্মের মধ্যে সমঝোতা, সহিষুতা, ও বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক উন্নয়নের প্রয়াশ পাবে এবং শান্তিরক্ষার স্বার্থে জানিসংঘের কার্যবলীকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

(৩) কোন ধনের শিক্ষা সন্তানকে দেওয়া হবে, তা বেছে নেবার পুর্বাধিকার পিতামাতার থাকবে।

ধারা ২৭

১) প্রত্যেকেরই সমষ্টিগত সাংকৃতিক জীবনে অংশগ্রহণ করা, শিল্পকলা উপভোগ করা এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি অ তার সুফল সমূহে অংশীদার হয়ার অধিকার রয়েছে।

(২) বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শিল্পকলা ভিত্তিক কো কর্মের রচয়িতা হিসেবে নৈতিক ও বৈষয়িক স্বার্থ সংরক্ষণের অধিকার প্রত্যেকেরই থাকবে।

ধারা ২৮

এ ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত অধিকার ও স্বাধিনতাসমূহের বাস্তবয়ন সম্ভব এমন একটি সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় অংশীধারীত্বের অধিকার প্রত্যেকেরই আছে।

ধারা ২৯

১) প্রত্যেকেরই সে সমাজের প্রতি পালনীয় কর্তব্য রয়েছে, যে সমাজেই কেবল তার আপন ব্যক্তিত্বের স্বাধীন এবং পূর্ণ বিকাশ সম্ভব।

(২) আপন স্বাধীনতা এবং অধিকারসমূহ ভোগ করার সময় প্রত্যেকেরই কেবলমাত্র ঐ ধরনের সীমাবদ্ধতা দ্বারা নিয়নন্ত্রিত হবেন যা অন্যদের অধিকার ও স্বাধীনতারসমূহ নিশ্চিত করা এবং একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নৈদিকতা, গণশৃখলা ও সাধারণ কল্যানের ন্যায়ানুগ প্রয়োজন মেটবার জন্য আইন দ্বারা নির্নীত হবে।

(৩) জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও মূলনীতির পরিপন্থী কোন উপায়ে এ অধিকার ও স্বাধীনতারসমূহ ভোগ করা যাবে না।

ধারা ৩০

কোন রাষ্ট্র, গোষ্ঠী বা ব্যক্তি এ ঘোষণাপত্রের কো কিছুকেই এমনভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে না, যার বলে তারা এই ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ নস্যাৎ করতে পারে এমন কোন কাজে লিপ্ত হতে পারেন কিংবা সে ধরনের কোন কাজ সম্পাদন করতে পারেন।